স্বপ্নবিকাশ
কলকেন্দ্রের উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথের জন্ম ২১ আগস্ট, ১৯৫৫, ভোলা সদরে।
চার বোন ও এক ভাই এর মধ্যে তিনি চতুর্থ। বর্তমানে প্রয়াত মা ভোলা সরকারী বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এবং পিতা সরকারী চাকুরীতে ছিলেন। দেবপ্রসাদ দেবনাথ
১৯৭০ সনে মাধ্যমিক এবং ১৯৭২ সনে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ১৯৭৩ সনে ভর্তি হন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে বি.এ (অনার্স) এবং এম.এ কোর্স সম্পন্ন করে
১৯৭৯ সনে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্কুল ও কলেজ পযার্য়ে নাটকের সাথে সম্পর্ক তৈরী হলেও দেবপ্রসাদ দেবনাথ নিয়মিত ভাবে নাটকের সাথে যুক্ত হন ১৯৭৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর তৎকালীন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নাট্যচক্র’ -এর সাথে। নাট্যচক্র প্রযোজিত বিভিন্ন নাটকে অভিনয়, আলোক পরিকল্পনা ছাড়াও অন্যান্য নাট্যদলের প্রযোজিত নাটক, নৃত্যনাট্য, প্যান্টোমাইম ইত্যাদিতে আলোক পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন।
তাঁর
অভিনীত মঞ্চ নাটকের সংখ্যা প্রায় ১০টি। নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা প্রায় ১৬টি।
নির্দেশিত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তুতি এবার দিন বদলের (১৯৮২), সুখপাঠ্য
ভারতের ইতিহাস (১৯৮৪), সুবচন নির্বাসনে (১৯৮৭), জনক (১৯৯৫), বাড়ীতে একা (১৯৯৮),
আলোর পথযাত্রী (১৯৯), গুনাইবিবি (২০০০), দোররা (২০০০), সিংহের বন্ধু(২০০৯), একা এক
নারী (২০১৯)। তিনি অভিনয়, আলোক পরিকল্পনা বিষয়ে দেশ ও বিদেশের প্রশিক্ষকদের অধীনে
বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষক হিসেবেও কর্মশালা
পরিচালনা করেছেন। নাট্যচক্র পরিচালিত নাট্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নাট্যশিক্ষাঙ্গন’
এর প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, তিনি জার্মান
সরকার প্রদত্ত স্কলারশীপ এবং স্টাডি ট্যুর এর আওতায় দুইবার জার্মানী সফর করেন এবং
জার্মান থিয়েটার বিষয়ে সম্যক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি জার্মান
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘গ্যেটে ইন্সটিট্যুট’ এর গৃহীত প্রকল্পের আওতায় শিশুদের
জন্য তিনটি নাটক পরিচালনা করেন । এর মধ্যে দু‘টি নাটক ছিল জার্মান গ্রিপস্ থিয়েটার
পদ্ধতির অভিনয় রীতির যা বাংলাদেশে প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছিল।
তিনি
বাংলাদেশে আয়োজিত বিভিন্ন নাট্যোৎসব ছাড়াও ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকাতে আন্তর্জাতিক
নাট্যোৎসবে তাঁর নির্দেশিত নাটক নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি
ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট (আইটিআই) বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে
২৫তম বিশ্বকংগ্রেসে জার্মানীর মিউনিখ (১৯৯৩), ২৬তম বিশ^ কংগ্রেসে
ভেনেজুয়েলার কারাকাস (১৯৯৫), ২৭তম বিশ্বকংগ্রেসে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল (১৯৯৭), ৩৬তম
বিশ্বকংগ্রেসে মধ্যপ্রাচ্যের ফুজাইরাহ্ (২০২৩) তে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ
করেন।
সাংগঠনিক
কার্যক্রমে দেবপ্রসাদ দেবনাথ দীর্ঘকাল নাট্যচক্র-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সভাপতিমন্ডলীর
সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি থিয়েটার সেন্টার ফর চিলড্রেন (টিসিসি) এর
আর্টিস্টিক ডিরেক্টর, থিয়েটার ডিজাইনার্স ইন্সটিটিউট (টিডিআই) এর আহবায়ক এবং
উত্তরা কালচারাল সোসাইটি’র পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দেবপ্রসাদ
দেবনাথ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের অর্থ সম্পাদক এবং সেক্রেটারী জেনারেলের
দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট (আইটিআই)
এর বাংলাদেশ কেন্দ্রের জেনারেল সেক্রেটারী।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ১৯৭৯ সনে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ
বিমান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে স্বল্পকালীন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর তিনি
বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৯৮১ সনে যোগদান করেন এবং নিয়মিত চাকরী শেষে ২০১৫ সনে
মহাব্যবস্থাপক পদে অবসর গ্রহণের পর পুনরায় একই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এর
পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরী হতে প্রায ৪০ বছরেরকর্মজীবন শেষে অবসর
গ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের পিতা দেবপ্রসাদ দেবনাথকে থিয়েটার প্রবর্তিত ‘জাকারিয়া স্মৃতি পদক’ প্রদান করা হয় ২০০২ সনে এবং পদাতিক নাট্য সংসদ প্রবর্তিত বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক, শিক্ষাবিদ ‘সৈয়দ বদরুদ্দিন হোসাইন স্মারক সম্মাননা’ প্রদান করা হয় ২০২২ সনে।
একেবারে শুরু থেকে সংস্কৃতিক বিকাশে স্বপ্নবিকাশ
কলাকেন্দ্রের উপদেষ্টা, মহান শিল্পের পূজারী দেবপ্রসাদ দেবনাথের অসামান্য
দিকনির্দেশনায় এগিয়ে চলেছি আমরা।